অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রংপুরে তিন দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা করেছে ভূমিহীন ও গৃহহীনরা। পদযাত্রা থেকে খাস জমিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম কমানো ও আর্মি-পুলিশের রেটে গরিবদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীন সংগঠনের ব্যানারে নগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা মোড় থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে তাজহাট, আনসারী মোড়, বাবুপাড়া হয়ে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে শেষ হয়।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনের প্রধান আনোয়ার হোসেন বাবলু, সংগঠক আহসানুল আরেফিন তিতুসহ ভূমিহীন নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা অবিলম্বে তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে সরকার প্রধানের প্রতি তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
সমাবেশে আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, রংপুর সিটি করপোশেন এবং এর আশেপাশের উপজেলার কয়েক সহস্র ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিন্নমূল, ঠিকানাবিহীন পরিবার খাস জমিতে তাদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। উল্লিখিত পরিবারগুলো নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অভাবের তাড়নায় ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব বা জন্মগতভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন। এসব পরিবারের বিরাট অংশ সড়ক মহাসড়কের ধারে, রেললাইনের ধারে মাটি ভাড়া নিয়ে চালাঘর করে বা ঘর ভাড়া নিয়ে একই ঘরে ১০/১২ জন মিলে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে মুজিববর্ষে দেশের সকল ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের আশ্বাসে রংপুরের ভূমিহীন গৃহহীনরাও আশায় বুক বেঁধেছিলো। ইতিমধ্যে অন্যের জমিতে ভাড়ায় ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের জমির মালিক/দখলদাররা উচ্ছেদ শুরু করেছে। জমির মালিকের বেধে দেওয়া সময় অতিক্রম হলে ঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কোন কোন ভূমিহীনদের চলে যেতে বাধ্য করার জন্য রাতের অন্ধকারে ঘরের বারান্দায়, মল দিয়ে ঢিল ছুড়ছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বনামে, বেনামে বিত্তবানরা সরকারি খাস জমি বরাদ্দ ও দখল করে আছে। এসব জমির বরাদ্দ বাতিল এবং অবৈধ দখলদারে উচ্ছেদ করে ওই সব খাস জমিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্মি-পুলিশের রেটে রেশনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এটি সরকারের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে রংপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলার ৫ সহস্রাধিক ভূমিহীন পরিবারের তালিকা ভোটার আইডি কার্ডসহ জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের দাবি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নাকি ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে বাধা রয়েছে। কারণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সকল খাস জমি অকৃষি। জেলা প্রশাসন চায় ভূমিহীনদের উপজেলায় পুনর্বাসন করতে। কিন্তু রংপুর সিটি কর্পোরেশন ক্ষেত্রে একথা খাটে না।
আনোয়ার হোসেনের দাবি, রংপুর সিটি কর্পোরেশন পুরাতন পৌরসভার সাথে নতুন যে ১৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা যুক্ত হয়েছে তার পুরোটাই কৃষি জমি। আবার যে-সব ভূমিহীন এখানে বাস করে তারা ভ্যান, রিকশা, থ্রি-হুইলার চালিয়ে, দিনমজুরি করে, বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে, হাসপাতাল ক্লিনিক, রাস্তাঘাট, ড্রেন পয়-পরিষ্কারসহ বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ করে কোন রকমে জীবন চালায়। গ্রামে বছরে তিন মাস কৃষিকাজ ছাড়া অন্য কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে শহরে বসবাসকারী ভূমিহীনদের উপজেলায় ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করলে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে সিটি করপোরেশন এলাকায় যে বিশাল পরিমাণ খাসজমি স্বনামে, বেনামে বিত্তবানরা ভোগদখল করছে তাদের কাছ থেকে সেসব জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান। এছাড়া রংপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় কালেক্টরেটের অধীনে অনেক জমি ও বাড়ি রয়েছে, যেখানে সরকারি আমলা ও প্রভাবশালীরা বেনামে ভোগদখল করছে বা জমি কিংবা বাড়ি ভাড়া দিয়ে লাভবান হচ্ছে। ইতিমধ্যে উচ্ছেদকৃত ভূমিহীনদের এসব জমি বা বাড়িতে পুনর্বাসন করতে হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম কমিয়ে গরীব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে এবং আর্মি-পুলিশের রেটে ভূমিহীনসহ সকল নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
Leave a Reply